পাতানো সংবাদ সম্মেলন
এটি এমন একটি সত্য, যা মিথ্যার ছদ্মবেশে নিজের পরিচয় লুকিয়ে রাখে, যেন সে নিজেই একটি গল্প, যা বলা হলেও শোনা যায় না, আর শোনা হলেও মনে রাখা হয় না।
শনিবার সকাল থেকেই ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের পরিবেশে যেন একটা চাপা অস্বস্তি। একরকম গুমোট ভাব চারপাশে। লবির এক কোণে দাঁড়িয়ে কয়েকজন সাংবাদিক ফিসফিস করে নিজেদের মধ্যে কথা বলছেন।
—কোনো প্রশ্ন করা যাবে না? সিরিয়াসলি?
—হুম, আগেই বলে দিয়েছে।
—এইটা কি প্রেস কনফারেন্স না মঞ্চনাটক?
—নাটক বললে ভুল হবে, এটা আসলে একটা সিনেমা। পরিচালক শফিকুল আলম, নায়ক-নায়িকা কে জানো?
—কোথায় জানি শুনেছি, ‘রাষ্ট্রের উন্নয়ন’ আর ‘সাংবাদিকতার স্বাধীনতা’ নামে দুইজন লিড ক্যারেক্টার আছে!
প্রথম দৃশ্য: লবির কানাঘুষা
সাংবাদিকতা জীবনের অর্ধেকেরও বেশি সময় পার করা প্রবীণ সাংবাদিক হুমায়ুন কবির সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে তাকালেন। তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তরুণ রিপোর্টার মিনহাজ চাপা স্বরে বলল, “ভাই, সাংবাদিকতা তাহলে আমরা শিখলাম ক্যান?”
হুমায়ুন হেসে বললেন, “জানিস, ছোটবেলায় গল্প শুনতাম, রাজা নাকি নতুন জামা পরে বের হতো, কিন্তু আসলে সে ছিল উলঙ্গ।”
মিনহাজ চোখ বড় বড় করে বলল, “তাহলে আমরা রাজ্যের সেই বাচ্চাটা, যে বলবে, ‘রাজা উলঙ্গ’?”
“কিন্তু পারবি? যেহেতু প্রশ্ন করাই নিষেধ।”
দ্বিতীয় দৃশ্য: পাতানো নাটকের মঞ্চায়ন
হলরুমে সব কিছু নিখুঁতভাবে সাজানো। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মঞ্চে উঠে হাসলেন। পাশে দাঁড়িয়ে প্রধান উপদেষ্টার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ফয়সাল আহমেদ। মুখে এমন হাসি যেন সবকিছু ঠিকঠাক চলছে।
প্রথম প্রশ্ন করার অনুমতি পেলেন এএফপির আনিসুর রহমান।
“বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্থিতিশীলতা রক্ষার প্রচেষ্টাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?”
জাতিসংঘ মহাসচিব কূটনৈতিক হাসি দিলেন। “বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ। আমি আশা করি, সরকার এবং জনগণ একসঙ্গে কাজ করবে।”
এরপর একে একে প্রশ্ন করলেন নিউ এইজ, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস এবং ডেইলি স্টারের সাংবাদিকরা। কিন্তু তাদের প্রশ্নগুলোর ভাষা এমন ছিল যেন তারা নতুন সরকারের মুখপাত্র!
পেছনের সারিতে বসে থাকা সাংবাদিক হাসান ফিসফিস করে বললেন, “আরে ভাই, এ তো দেখি রঙিন বেলুন ওড়ানোর প্রতিযোগিতা!”
তৃতীয় দৃশ্য: হালকা বাতাসে উড়ে যাওয়া দীর্ঘশ্বাস
সংবাদ সম্মেলন শেষ হলে সাংবাদিকরা বাইরে এলেন। প্রবীণ সাংবাদিক হুমায়ুন কবির আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
পাশ থেকে মিনহাজ বলল, “ভাই, আপনি মনে হয় কিছু বলতে চাইছিলেন?”
হুমায়ুন হালকা হেসে বললেন, “আমার সময় শেষ, মিনহাজ। এখন তোমাদের সময়।”
মিনহাজ কিছু বলতে গিয়েও চুপ করে গেল। পাশে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে বাদাম বিক্রেতা মৃদু স্বরে বলল, “বাদাম নিবেন স্যার?”
হুমায়ুন কবির পকেট থেকে একটা বিশ টাকার নোট বের করে বললেন, “বাদাম দাও ভাই। দেখছি, বাদামের খোসার ভেতর কি কোনো সত্য লুকিয়ে আছে।”